Rommo

ঘুষ ঘুষি
          আবুলের বডি ফিগারের দিকে তাকালে মনে হয় না যে-সে আবুল৷ যেমন তাগড়া-জোয়ান, তেমন উচ্চ-লম্বা৷ ছয় ফিট তো হবেই৷ তবে স্বভাবতই সে চুপচাপ থাকতে ভালবাসেতো৷ এস এস সির পর সেনাবাহীনির সৈনিক পদে চাকরি পায় সে৷ কিন্তু পড়া লেখার বাধা কোথায়! ঠিকি চুপিচুপি কলেজে ভর্ত িহয়ে যায়৷ এমনকি মোটামুটি ভাবে পাস করে৷ এখন তার ইচ্ছা প্রমোশনের পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ পদে যোগদান৷ পরীক্ষার দিনও এসে গেলো৷ সিরিয়াল মোতাবেক আবুলের ডাক পড়লো৷ শুরু হলো আবুলের মেডিকেল পরীক্ষা৷ আবার শেষ হলো৷ মেজর সাহেব আবুলের রিপোর্ট লিখবে  যখন,তখন আবুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়৷ আবুল হাত বাড়ানোর মানে বুঝতে পারেনা৷ তাই স্যারের কাছে জানতে চাই- রিপোর্ট ফিট্ আছে কি না ?
-হ্যা, আছে৷ তবে রিপোর্ট খাতায় লেখা যাচ্ছে না৷
-কেনো স্যার!
-বুঝ না! টাকা আছে ? পঁচিশ হাজার টাকা দিতে হবে৷ তবেই মেডিকেলে ফিট্ লেখা হবে, নয় তো আন ফিট্ লেখা হবে৷ ( আসলে টাকার পরিমানটা ১৯৭৫ সালের হিসেবে ধরা হয়েছে,কারণ- এটা তখনকার ঘটনা)
আবুল তখন স্যারের মতলব বুঝে ফেলে৷ তাই আর কাল বিলম্ব না করে মেডিকেলে ফিট্ কি না তা বুঝিয়ে দেয়৷ ঠিক নাক বরাবর একটা ঘুষি৷ সাথে সাথে স্যার বুঝে গেলেন আবুল আসলে মেডিকেলে ফিট্ ছিল৷ নাক দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো৷ অবশ্য াদঁত পড়েছিল একটা৷ আবুলকে আটক করা হলো৷ বিচার বসলো৷ সিদ্ধান্ত হলো- আবুলের আর কোনো দিন প্রমোশন হবে না৷ হয়তো বড় ধরনের শাস্তি আবুলকে দেওয়া হতো, সেটা হয়নি আবুলের আবুল বেশে চলা-ফেরার জন্য৷ আবুল আসলে সবার কাছে সরল মনের মানুষ ছিল৷ কিন্তু সেও যে পারে প্রতিবাদ করতে তা কেউ ভাবতেও পারেনি৷ কিন্তু আবুল কি অতোই আবুল! ফসল ফলেনা এমন জমিতে আবাদ করতে নেই এটা তার জানা৷ তাই সে সুযোগ বুঝে সেনাক্যাম্প থেকে  পলায়ন করে বাড়ি চলে আসে৷ এরপর কেটে যায় এক বছর৷
          পুলিশে লোক নিবে, তা কার কাছ থেকে যেন শুনেছিল আবুল৷ এখন তার সিদ্ধান্ত পুলিশের চাকরি৷ যেভাবেই হোক চাকরিটা তার চাই৷ আবুল ভেবে চিন্ত েএস, আই এর বাড়িতে গেলো৷ সাথে নিলো কেজি তিনেক খাশির মাংশ৷ কারণ, তার জানা ছিল- মানুষ যত বড়ই ক্ষমতাবান হোক না কেন এক জায়গায় মাত৷ আর তা হলো বউ৷ বাড়ির দরজায় কড়া নাড়লো আবুল৷ তখন পুলিশটা ছিল ডিউটিতে৷ তাই দরজা খোলে পুলিশের বউ৷ আবুল ঠিক আপন আত্নীয়র মত ভাল-মন্দ জিঙ্গেস করে৷ এরপর মাংশের থলেটা হাতে ধরিয়ে দেয়৷ তারপর বলে তার আসার কারণটা৷ পুলিশের বউ বেশ আগ্রহের সাথে বলে উঠলো- মনে করেন আপনার চাকরি হয়েগেছে৷ আপনি নিশ্চিন্ত েথাকতে পারেন৷ আবুল বেশ খুশিতে পুলিশের সাত বছরের মেয়েটাকে পাশের বাজারের গার্মেটস থেকে সুন্দর জামা কিনে দিলো৷
         দিনক্ষণ মত পুলিশে লোক নেয়া শুরু হলো৷ আবুল লাইন ধরে দাড়িয়ে ছিলো৷ বলতে গেলে সবার আগেই এক সিপাহী এসে বলল- এখানে আবুল নামে কেউ কি আছে? আবুল হাত উচু করলো৷ বলল- আমি আবুল৷ সেপাহী বলল- আপনার চাকরি হয়েগেছে৷ আপনাকে স্যার ডাকছেন৷ বেশ হয়েগেলো আবুলের পুলিশের চাকরি৷ জয়েন্ট করলো৷ এভাবে বছর খানেক চাকরি করলো৷ কিন্তু প্রমোশনের চিন্তা কার না মাথায় আসে৷ আবুলের এবার কঠিন সিদ্ধান্ত প্রমোশন পেতেই হবে৷ সময় মত আবুলসহ আরো অনেকে এস, আই পদে পরীক্ষা দিলো৷ ফলাফল বের হলো৷ আবুল- প্রথম হয়েছে৷ লোক নিবে সাত জন৷ আবুল তো নিশ্চিত ভেবে নিলো সে এস, আই হয়েগেছে৷ কিন্তু দেখা গেলো প্রমোশন লেটার গেলো অন্য সাত জনের নামে৷ আবুলের পরিচিত ছয় জন পরীক্ষা দিয়েছিল তারাও ফলাফলের সারিতে ছিলো৷ কিন্তু যারা প্রমোশন পেলো তাদের ফলাফলের লিষ্টে নামও নেই৷ এতে আবুলের হলো চরম রাগ৷ অন্য ছয় জনসহ আবুল গেলো হেড স্যারের কাছে৷ অভিযোগ করে তাদের কেনো প্রমোশন লেটার দেওয়া হয়নি৷ তখন স্যার বলে-
-তারা প্রত্যেকে পঁঞ্চাশ হাজার করে টাকা দিয়েছে৷ তোমরা কি দিয়েছ ?
কথাটা বলতে দেরি হলেও আবুলের হাতটা ঠিকি দ্রুত গতিতে স্যারের নাকের উপর পড়লো৷ শুধু দুড় একটা শব্দ হলো৷ এরপর অন্যরাও শুরু করে ভাংচুর৷ তবে এবার আবুল ঘুষের বোনাস হিসেবে কিল, ঘুষি আর লাথি একটু বেশিই ছোড়ে৷ যদিও চাকরিটা হারাতে হয়, কিন্তু তাতে তাদের কোনো দুঃখ ছিলো না৷

মোঃ রুহুল আমিন রুমী